বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আজ আমরা ব্রুনাইয়ের গল্প করবো, যে দেশটি তেল আর গ্যাসের প্রাচুর্যে সারা বিশ্বে পরিচিত। এই ছোট্ট সালতানাতের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হলো এই জ্বালানি সম্পদ, যার ওপর নির্ভর করে তাদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রা। কিন্তু বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে, যখন জ্বালানি খাত দ্রুত বদলাচ্ছে এবং পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে, ব্রুনাইও কি তার চিরাচরিত পথে হাঁটছে?
নাকি তারাও নতুন দিগন্তের সন্ধানে? ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, এই পরিবর্তনের ধারা শুধু তাদের নয়, বিশ্ব অর্থনীতিতেও এক নতুন বার্তা দিচ্ছে। ব্রুনাইয়ের তেল শিল্পের এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলো ঠিক কী এবং এর ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে, চলুন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ঐতিহ্যবাহী তেল-গ্যাস নির্ভর অর্থনীতি থেকে উত্তরণ

ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধির ভিত্তি
আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ব্রুনাইয়ের নাম শুনলেই প্রথমে তেল আর গ্যাসের অফুরন্ত ভাণ্ডারের কথা মনে আসে। এশিয়ার এই ক্ষুদ্র দেশটিকে অনেকেই তার জ্বালানি সম্পদের জন্য চেনেন। আসলে, ব্রুনাইয়ের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৯০ শতাংশই আসে অপরিশোধিত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন থেকে। তারা প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ ৬৭ হাজার ব্যারেল তেল এবং প্রায় ২৫.৩ মিলিয়ন ঘনমিটার তরল প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন করে, যা তাদের বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশে পরিণত করেছে। সিঙ্গাপুরের পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ব্রুনাইয়ের মানব উন্নয়ন সূচক দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এই সম্পদই দেশটির নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, আবাসন ও চালের মতো মৌলিক চাহিদা পূরণে ভর্তুকির ব্যবস্থা করেছে, যা সত্যিই ঈর্ষণীয়। এমনকি সেখানে জ্বালানি তেলের দাম বোতলজাত পানির চেয়েও কম!
আমি যখন প্রথম এই তথ্যটা শুনেছিলাম, বিশ্বাসই করতে পারিনি। কিন্তু এটাই বাস্তব। এই অর্থনৈতিক কাঠামোই ব্রুনাইকে এত দীর্ঘ সময় ধরে স্থিতিশীল এবং সমৃদ্ধ রেখেছে।
বদলে যাওয়া বিশ্ব অর্থনীতির প্রেক্ষাপট
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সবকিছুই বদলায়, তাই না? আমরা এখন এমন এক বৈশ্বিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি যেখানে জীবাশ্ম জ্বালানির ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে বিশ্বব্যাপী যে ঝোঁক বাড়ছে, তা ব্রুনাইয়ের মতো তেল নির্ভর অর্থনীতির জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। জ্বালানি তেলের মজুতও ধীরে ধীরে কমে আসছে বলে অনুমান করা হচ্ছে, যা দেশটির দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য চিন্তার কারণ। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, এই পরিবর্তনগুলো ব্রুনাইয়ের জন্য এক নতুন দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। কেবল তেল-গ্যাসের ওপর নির্ভর করে থাকলে ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে, এটা এখন ব্রুনাইয়ের নীতিনির্ধারকরাও বুঝতে পারছেন। তাই তারা এখন নতুন পথের সন্ধানে।
অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণের স্বপ্ন: ওয়াসাওয়ান ব্রুনাই ২০৩৫
দূরদর্শী পরিকল্পনা: ব্রুনাই ভিশন ২০৩৫
ব্রুনাই সরকার “ওয়াসাওয়ান ব্রুনাই ২০৩৫” (Wawasan Brunei 2035) নামে একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যা দেশটির অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎকে তেল-গ্যাসের নির্ভরতা থেকে মুক্ত করতে চায়। এই ভিশনের মূল লক্ষ্য হলো উচ্চ শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা, উন্নত জীবনযাত্রার মান নিশ্চিত করা এবং একটি শক্তিশালী ও বৈচিত্র্যময় অর্থনীতি গড়ে তোলা, যা তেল-গ্যাসের বাইরেও টেকসই হবে। আমার কাছে এই উদ্যোগটা খুব দারুণ মনে হয়েছে। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এমন একটা পরিকল্পনা থাকা খুবই জরুরি। এই পরিকল্পনার আওতায় সরকার বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে চাইছে, যা তেল-গ্যাসের বাইরের শিল্প খাতগুলোকে উৎসাহিত করবে। সত্যি বলতে, এই উদ্যোগগুলো ব্রুনাইকে “প্রাচ্যের দুবাই” হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখাচ্ছে, যা শুনতে কল্পনার মতো মনে হলেও অসম্ভব নয়।
শিল্প ও বাণিজ্য খাতে নতুন দিগন্ত
এই ভিশনের আওতায় ব্রুনাই পর্যটন, কৃষি, হালাল শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি এবং লজিস্টিকসের মতো অ-জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। তারা চাইছে আঞ্চলিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে। আমার মনে হয়, যেকোনো দেশের উন্নতির জন্য শুধু একটি খাতের ওপর নির্ভর করে থাকা ঠিক নয়। বৈচিত্র্যকরণই পারে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে। যেমন, তারা এখন সুগন্ধি চালের মতো কৃষি পণ্য রপ্তানিতেও আগ্রহী। রয়্যাল ব্রুনাই এয়ারলাইন্সও ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক ভ্রমণের কেন্দ্র হিসেবে দেশটিকে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। এটা ব্রুনাইয়ের অর্থনৈতিক কাঠামোতে নতুন গতি আনবে বলেই আমার বিশ্বাস। এই পদক্ষেপগুলো কেবল ব্রুনাইয়ের অর্থনীতিকে মজবুত করবে না, বরং নতুন কর্মসংস্থানও তৈরি করবে, যা তরুণ প্রজন্মের জন্য খুবই ইতিবাচক।
টেকসই ভবিষ্যৎ ও নবায়নযোগ্য শক্তির পথে
পরিবেশবান্ধব জ্বালানির গুরুত্ব
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ব্রুনাইও এই বৈশ্বিক পরিবর্তনের বাইরে নয়। নবায়নযোগ্য জ্বালানি যেমন সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জলবিদ্যুৎ ইত্যাদির ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমে ব্রুনাই তার কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানোর চেষ্টা করছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, পরিবেশ রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। ব্রুনাইয়ের এই উদ্যোগ পরিবেশের জন্য যেমন ভালো, তেমনি ভবিষ্যতের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। যদিও তাদের তেল ও গ্যাসের অফুরন্ত মজুত আছে, তবুও টেকসই উন্নয়নের জন্য বিকল্প শক্তির উৎস খোঁজা অপরিহার্য। এই পদক্ষেপগুলো ব্রুনাইকে আরও পরিবেশ-সচেতন এবং আধুনিক দেশ হিসেবে গড়ে তুলবে।
কার্বন নিঃসরণ হ্রাস ও সবুজ অর্থনীতি
ব্রুনাই তার “ভিশন ২০৩৫” এর অধীনে কার্বন নিঃসরণ কমানোর এবং একটি সবুজ অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে শক্তি দক্ষতা বৃদ্ধি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে বিনিয়োগ এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার। আমার মনে হয়, এই ধরনের উদ্যোগ শুধু ব্রুনাই নয়, গোটা অঞ্চলের জন্য একটি মডেল হতে পারে। নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো মানে শুধু পরিবেশ রক্ষা নয়, নতুন অর্থনৈতিক সুযোগও তৈরি করা। যেমন, সোলার প্যানেল স্থাপন, বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি ইত্যাদি নতুন শিল্পের জন্ম দিতে পারে। আমি তো ভাবছি, যদি আমাদের দেশেও এমন উদ্যোগ নেওয়া যায়, তাহলে কত ভালো হয়!
মানবসম্পদ উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান
শিক্ষার মানোন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধি

ব্রুনাইয়ের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো মানবসম্পদ উন্নয়ন। “ওয়াসাওয়ান ব্রুনাই ২০৩৫” পরিকল্পনায় শিক্ষার মানোন্নয়ন, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। আমার মতে, একটি দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ তার জনগণ। যদি জনগণ শিক্ষিত এবং দক্ষ হয়, তাহলে তারা যেকোনো প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে পারে। ব্রুনাই সরকার বুঝতে পেরেছে যে, তেল-গ্যাসের বাইরে নতুন শিল্প গড়ে তুলতে হলে দক্ষ কর্মীর কোনো বিকল্প নেই। তাই তারা শিক্ষা খাতে প্রচুর বিনিয়োগ করছে, যাতে তরুণ প্রজন্ম পরিবর্তিত অর্থনীতির চাহিদা মেটাতে পারে।
নতুন কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা তৈরি
তেল-গ্যাসের বাইরে নতুন খাতগুলোতে কর্মসংস্থান তৈরি করা ব্রুনাইয়ের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাই সরকার উদ্যোক্তা তৈরি এবং ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলোকে (SMEs) উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আমার মনে হয়, তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা তৈরি করাটা খুব জরুরি। এতে শুধু ব্যক্তিগত উন্নতি হয় না, বরং দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। ব্রুনাইয়ের যুবকরা যাতে সরকারি চাকরির ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল না হয়ে নিজেরা কিছু করার কথা ভাবে, সেদিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে। আমি তো বলব, এই উদ্যোগগুলো ব্রুনাইকে একটি আরও গতিশীল এবং আত্মনির্ভরশীল সমাজে পরিণত করবে।
আঞ্চলিক সহযোগিতা ও বৈশ্বিক সম্পর্ক
আসিয়ান এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে ব্রুনাই
ব্রুনাই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের (ASEAN) একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে আসিয়ানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্রুনাই আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা করছে। আমার মনে হয়, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক যেকোনো দেশের উন্নয়নে এক বিশাল ভূমিকা পালন করে। আসিয়ানের মতো জোটে থাকার কারণে ব্রুনাই বিভিন্ন দেশের সাথে অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারছে এবং নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে। সম্প্রতি পূর্ব তিমুর আসিয়ানের ১১তম সদস্য হয়েছে, যা আঞ্চলিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও বৈদেশিক বিনিয়োগ
ব্রুনাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থাপন ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে, তারা বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহী। আমার মনে আছে, বাংলাদেশ ও ব্রুনাইয়ের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, যা উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হতে পারে। এসব উদ্যোগ ব্রুনাইয়ের অর্থনীতিকে আরও বৈচিত্র্যময় এবং স্থিতিশীল করতে সাহায্য করবে। আমি তো স্বপ্ন দেখি, একদিন ব্রুনাই শুধু তেলের জন্য নয়, তার শক্তিশালী এবং বৈচিত্র্যময় অর্থনীতির জন্যও বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পাবে।
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার পথ
অবলম্বন থেকে মুক্তি: একটি কঠিন যাত্রা
তেল ও গ্যাসের নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসা ব্রুনাইয়ের জন্য একটি সহজ কাজ নয়। কারণ, এই খাত থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব কমে গেলে, সরকারের পক্ষে নাগরিকদের দেওয়া বিভিন্ন ভর্তুকি ও সুযোগ-সুবিধা বজায় রাখা কঠিন হতে পারে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এই ধরনের পরিবর্তন সবসময়ই কঠিন হয়। মানুষকে নতুন পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগে। বিশেষ করে, যে সমাজে মানুষ সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেয়ে অভ্যস্ত, সেখানে নতুন করে নিজেদের উদ্যোগী করে তোলাটা এক বড় চ্যালেঞ্জ। তবে, ব্রুনাইয়ের জনগণ যদি এই পরিবর্তনের সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারে, তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।
ভবিষ্যতের জন্য আশার আলো
তবে চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি রয়েছে অফুরন্ত সম্ভাবনা। ব্রুনাইয়ের শক্তিশালী আর্থিক রিজার্ভ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সুদূরপ্রসারী “ওয়াসাওয়ান ব্রুনাই ২০৩৫” পরিকল্পনা তাদের এই যাত্রায় সাহায্য করবে। আমার মনে হয়, যদি সঠিক পরিকল্পনা এবং দৃঢ় সংকল্প থাকে, তাহলে যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। ব্রুনাই নতুন নতুন শিল্প খাতে বিনিয়োগ করছে, মানবসম্পদ উন্নয়নে জোর দিচ্ছে এবং পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। এই সব উদ্যোগ একত্রিত হয়ে ব্রুনাইকে একটি সমৃদ্ধ, টেকসই এবং বৈচিত্র্যময় অর্থনীতির দিকে নিয়ে যাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। এই পরিবর্তন কেবল ব্রুনাইয়ের জন্য নয়, বরং এশিয়া এবং বিশ্ব অর্থনীতির জন্যও এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
| অর্থনৈতিক দিক | ঐতিহ্যবাহী অবস্থা (তেল-গ্যাস নির্ভর) | ওয়াসাওয়ান ব্রুনাই ২০৩৫ (লক্ষ্য) |
|---|---|---|
| জিডিপির প্রধান উৎস | অপরিশোধিত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস (৯০% পর্যন্ত) | অ-তেল-গ্যাস খাত (পর্যটন, কৃষি, হালাল শিল্প, আইটি) |
| কর্মসংস্থান | মূলত সরকারি খাত ও জ্বালানি শিল্পে | বেসরকারি খাত ও উদ্যোক্তা ভিত্তিক কর্মসংস্থান |
| জ্বালানি নীতি | জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন ও রপ্তানি | নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস বিকাশ, কার্বন নিঃসরণ হ্রাস |
| বিনিয়োগ | প্রধানত তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান এবং উৎপাদনে | বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ আকর্ষণ, নতুন শিল্প খাতে |
| মানবসম্পদ | সীমিত প্রশিক্ষিত জনশক্তি, সরকারি চাকরির প্রতি ঝোঁক | উচ্চ শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি, কারিগরি প্রশিক্ষণ |
বন্ধুরা, ব্রুনাইয়ের এই যাত্রাপথ সত্যিই দারুণ অনুপ্রেরণামূলক, তাই না? তেল-গ্যাসের প্রাচুর্য থেকে বেরিয়ে এসে একটি টেকসই ভবিষ্যতের দিকে এগোনোর এই প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে সাহসী এবং দূরদর্শী। আমি মনে করি, তাদের ‘ওয়াসাওয়ান ব্রুনাই ২০৩৫’ ভিশন শুধু একটি সরকারি পরিকল্পনা নয়, এটি তাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি উজ্জ্বল স্বপ্ন এবং বর্তমান নেতৃত্ব ও জনগণের দৃঢ় সংকল্পের প্রতিচ্ছবি। এই বিশাল অর্থনৈতিক পরিবর্তনগুলো হয়তো রাতারাতি হবে না, পথে অনেক বাধা-বিপত্তি আসতে পারে, কিন্তু ব্রুনাই যেভাবে নতুন দিগন্ত উন্মোচনে বদ্ধপরিকর, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে, বড় স্বপ্ন দেখতে সাহস করলে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করলে অনেক কঠিন পথও সহজ হয়ে যায়। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্যও ব্রুনাইয়ের এই উদ্যোগ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। নিজেদের অর্থনৈতিক কাঠামোকে কেবল একটি বা দুটি খাতের উপর নির্ভর না করে বৈচিত্র্যময় করে তোলার গুরুত্বটা ব্রুনাইয়ের কাছ থেকে আমরা ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারি। এই পরিবর্তন তাদের অর্থনীতিকে আরও স্থিতিশীল এবং গতিশীল করে তুলবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
আলদাাম্বদা সঌলোো ইনদ তথ্য
১. ব্রুনাইয়ের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি দীর্ঘকাল ধরে তেল ও গ্যাস হলেও, দেশটি এখন ভবিষ্যতের কথা ভেবে নতুন অর্থনৈতিক খাতগুলোতে মনোযোগ দিচ্ছে। তাদের এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে, কোনো একটি নির্দিষ্ট খাতের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়নের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এই বৈচিত্র্যকরণের চেষ্টা তাদের অর্থনীতিকে আরও মজবুত করবে।
২. “ওয়াসাওয়ান ব্রুনাই ২০৩৫” (Wawasan Brunei 2035) হলো ব্রুনাই সরকারের একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা, যার মাধ্যমে তারা পর্যটন, কৃষি, হালাল পণ্য উৎপাদন এবং তথ্যপ্রযুক্তির মতো অ-জ্বালানি খাতগুলোতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। এই পরিকল্পনা শুধু অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাই আনবে না, বরং নতুন কর্মসংস্থানও তৈরি করবে এবং দেশের যুব সমাজকে নতুন সুযোগের দুয়ার খুলে দেবে।
৩. নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানো ব্রুনাইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা তাদের কার্বন নিঃসরণ কমানোর এবং একটি সবুজ অর্থনীতি গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে। সৌরশক্তি এবং অন্যান্য পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্রুনাই বিশ্বজুড়ে পরিবেশ সুরক্ষার আন্দোলনে নিজেদের ভূমিকা রাখছে।
৪. মানবসম্পদ উন্নয়ন ব্রুনাইয়ের ভবিষ্যৎ অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য। উচ্চশিক্ষা, কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা বৃদ্ধির কর্মসূচির মাধ্যমে তারা একটি শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি তৈরি করছে, যারা পরিবর্তিত অর্থনীতির চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। আমার মতে, যেকোনো দেশের আসল সম্পদ হলো তার জনগণ, আর তাদের সঠিক প্রশিক্ষণ দিলে তারা যেকোনো অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারে।
৫. ব্রুনাই কেবল অভ্যন্তরীণভাবে নয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্তরেও সহযোগিতা বাড়াচ্ছে। আসিয়ান (ASEAN) জোটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে তারা প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক জোরদার করছে। এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কগুলো ব্রুনাইকে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আরও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি
ব্রুনাই, একসময় সম্পূর্ণরূপে তেল ও গ্যাস নির্ভর একটি সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল, এখন তার অর্থনীতির ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই পরিবর্তন শুধু অর্থনীতির একপেশে নির্ভরতা কমিয়ে আনছে না, বরং একটি আরও টেকসই ও গতিশীল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার পথ দেখাচ্ছে। ‘ওয়াসাওয়ান ব্রুনাই ২০৩৫’ ভিশনের অধীনে তারা অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণের উপর জোর দিচ্ছে, যেখানে পর্যটন, কৃষি, হালাল শিল্প এবং তথ্যপ্রযুক্তির মতো নতুন খাতগুলোতে বিপুল বিনিয়োগ বাড়ানো হচ্ছে। এই পদক্ষেপগুলো প্রমাণ করে যে, শুধু একটি খাতের উপর নির্ভর না করে একাধিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা কতটা জরুরি।
এর পাশাপাশি, নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, যাতে একটি দক্ষ ও উদ্ভাবনী জনশক্তি গড়ে ওঠে, যারা পরিবর্তিত অর্থনীতির চাহিদা মেটাতে পারে। আমি মনে করি, একটি দেশের সত্যিকারের শক্তি তার জনগণের শিক্ষা ও দক্ষতার উপর নির্ভর করে। যদিও এই যাত্রায় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, বিশেষ করে পুরনো নির্ভরতা এবং অভ্যস্ততা থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে, ব্রুনাইয়ের দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছা, শক্তিশালী আর্থিক রিজার্ভ এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা তাদের এই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে। এই সাহসী পদক্ষেপগুলো ব্রুনাইকে কেবল একটি টেকসই ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে না, বরং বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একটি নতুন উদাহরণও স্থাপন করবে এবং অন্যান্য ছোট অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য একটি মডেল হিসেবে কাজ করবে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖
প্র: ব্রুনাইয়ের তেল ও গ্যাস শিল্পের বর্তমান অবস্থা কী এবং তারা কি শুধু এর উপরই নির্ভরশীল?
উ: আমি যখন প্রথম ব্রুনাইয়ের অর্থনীতি নিয়ে জানতে শুরু করি, তখন আমার মনে হয়েছিল, ইসস! পুরোটা তো শুধু তেল আর গ্যাস নির্ভর! কিন্তু আসলে ব্যাপারটা একটু জটিল। ব্রুনাই বহু বছর ধরে তাদের বিশাল তেল ও গ্যাসের রিজার্ভের উপর ভরসা করে এসেছে, যা তাদের বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশে পরিণত করেছে। এর ফলে তাদের নাগরিকদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা আর জীবনযাত্রার মান বেশ উন্নত। সম্প্রতি, বৈশ্বিক বাজারে তেলের দামের ওঠানামা এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ায় ব্রুনাই কিন্তু বসে নেই। তারা বুঝতে পারছে যে, শুধু তেল আর গ্যাসের উপর নির্ভর করে বসে থাকলে হবে না। তাই, নিজেদের অর্থনীতিকে আরও বৈচিত্র্যময় করার জন্য তারা অনেক উদ্যোগ নিচ্ছে। আমার অভিজ্ঞতা বলে, এই পরিবর্তনগুলো দ্রুত হয় না, কিন্তু তারা সঠিক পথেই হাঁটছে।
প্র: বৈশ্বিক জ্বালানি খাতের পরিবর্তন ব্রুনাইয়ের অর্থনীতিকে কিভাবে প্রভাবিত করছে এবং তারা এর জন্য কী পদক্ষেপ নিচ্ছে?
উ: সত্যি বলতে, বৈশ্বিক জ্বালানি খাতের এই বড়সড় পরিবর্তনগুলো ব্রুনাইয়ের জন্য এক বিশাল চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে। যখন আমি প্রথম এই বিষয়ে গবেষণা করি, তখন মনে হয়েছিল তাদের জন্য এটা একটা বিশাল ধাক্কা হতে পারে। সারা বিশ্বে এখন পরিবেশবান্ধব জ্বালানির দিকে ঝুঁকছে, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর চাপ বাড়ছে। এর সরাসরি প্রভাব ব্রুনাইয়ের তেল ও গ্যাস রপ্তানির উপর পড়ে। তবে, ব্রুনাই সরকার এই ধাক্কা সামলানোর জন্য বেশ কিছু স্মার্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে। তারা তাদের অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করতে চাচ্ছে, অর্থাৎ শুধু তেল নয়, অন্যান্য খাতেও বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। যেমন, ইসলামি ব্যাংকিং, পর্যটন, কৃষি এবং হালাল শিল্পে তারা মনোযোগ দিচ্ছে। এমনকি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতেও বিনিয়োগের কথা ভাবছে। আমার মনে হয়, এই পদক্ষেপগুলো তাদের দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্বের জন্য খুবই জরুরি।
প্র: ব্রুনাইয়ের তেল ও গ্যাস শিল্পের ভবিষ্যৎ কী এবং তারা কি সফলভাবে নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে পারবে?
উ: ব্রুনাইয়ের তেল ও গ্যাস শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। আমি নিজেও এই প্রশ্নটা নিয়ে অনেকবার ভেবেছি। সত্যি বলতে, আমার মনে হয় না ব্রুনাই রাতারাতি তেল ও গ্যাস পুরোপুরি ছেড়ে দেবে, কারণ এখনো এই শিল্প তাদের আয়ের সিংহভাগ। তবে, তাদের সবচেয়ে বড় কাজ হলো এই সম্পদ থেকে প্রাপ্ত আয়কে বুদ্ধিমানের মতো নতুন খাতে বিনিয়োগ করা। তারা চেষ্টা করছে তাদের যুবকদের জন্য নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি করতে এবং অর্থনীতিকে আরও টেকসই করতে। ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি, ব্রুনাইয়ের নেতৃত্বের বিচক্ষণতা এবং তাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কারণে তারা এই পরিবর্তনের সাথে সফলভাবে মানিয়ে নিতে পারবে। হয়তো আগামী দশকে আমরা ব্রুনাইকে শুধু তেল আর গ্যাসের দেশ হিসেবে নয়, বরং আরও বৈচিত্র্যময় এবং উন্নত অর্থনীতির একটি দেশ হিসেবে দেখব।






