ব্রুনাইয়ের মুসলিম শিষ্টাচার ভুল এড়াতে জানা চাই যে গোপন তথ্যগুলো

webmaster

브루나이 무슬림 예절 - **Prompt for Modest Clothing and Warm Greetings:**
    "A captivating portrait of a young Bruneian w...

প্রিয় পাঠকবৃন্দ, কেমন আছেন সবাই? আজ আপনাদের সাথে এক ভিন্ন দেশের সংস্কৃতি আর শিষ্টাচার নিয়ে কথা বলতে এসেছি – দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রত্ন, ব্রুনাই দারুসসালাম!

브루나이 무슬림 예절 관련 이미지 1

যখন আমরা নতুন কোনো দেশে পা রাখি, তখন সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা, রীতিনীতি আর ঐতিহ্যকে জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই না? বিশেষ করে ব্রুনাইয়ের মতো একটি ইসলামিক রাষ্ট্র যেখানে ধর্মীয় মূল্যবোধ সমাজের প্রতিটি স্তরে গভীরভাবে মিশে আছে, সেখানে মুসলিম শিষ্টাচার বোঝাটা কেবল সম্মান প্রদর্শনই নয়, বরং নিজেদের অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করার একটি দারুণ উপায়।আমি নিজেও যখন প্রথম ব্রুনাইয়ের বিষয়ে জানতে শুরু করি, তখন সেখানকার মানুষের বিনয় আর আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছিলাম। তবে তাদের জীবনধারার কিছু ছোট ছোট বিষয় আছে যা আমাদের দেশের থেকে ভিন্ন, আর সেগুলো না জানলে হয়তো অজান্তেই কোনো ভুল করে বসতে পারি। যেমন, পোশাক-পরিচ্ছেদ থেকে শুরু করে মেলামেশার ধরন, এমনকি উপহার আদান-প্রদান পর্যন্ত – সবকিছুতেই রয়েছে নিজস্বতা। বর্তমানে সচেতন ভ্রমণকারীরা শুধু দর্শনীয় স্থান দেখতেই নয়, বরং স্থানীয় সংস্কৃতিকে বুঝতে ও সম্মান করতেও আগ্রহী। ব্রুনাইয়ের ইসলামিক সংস্কৃতি এই দিক থেকে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা দিতে পারে, যদি আমরা তাদের প্রথাগুলো সম্পর্কে একটু ওয়াকিবহাল থাকি।আমার মনে হয়, এই সাংস্কৃতিক বোঝাপড়া আমাদেরকে শুধু একজন ভালো ভ্রমণকারী হিসেবেই নয়, বরং বিশ্বের প্রতি আরও সংবেদনশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। ব্রুনাইয়ের আতিথেয়তা ও তাদের ঐতিহ্যবাহী শিষ্টাচার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলে আপনার ভ্রমণ আরও আনন্দময় হবে, এ কথা আমি নিশ্চিত। চলুন, আজকের পোস্টে আমরা ব্রুনাইয়ের মুসলিম শিষ্টাচার সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জেনে নিই।আমরা এখন ব্রুনাইয়ের মুসলিম শিষ্টাচার সম্পর্কে আরও বিস্তারিতভাবে জেনে নেব।

পোশাক-পরিচ্ছদ: শালীনতার সংস্কৃতি

আমি যখন প্রথম ব্রুনাই সম্পর্কে পড়াশোনা শুরু করি, তখন পোশাকের বিষয়ে তাদের যে গভীর শালীনতা, সেটা আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছিল। আমাদের দেশেও ধর্মীয় পোশাকের প্রতি সম্মান আছে, কিন্তু ব্রুনাইয়ে সেটা যেন দৈনন্দিন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ওখানে গেলে আপনি দেখবেন, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই এমনভাবে পোশাক পরছেন যা তাদের সংস্কৃতি আর ধর্মীয় মূল্যবোধকে ধারণ করে। বিশেষ করে মুসলিম নারীরা প্রায়শই হিজাব বা মাথা ঢাকার স্কার্ফ পরেন, যা তাদের পরিচয় আর সম্মানের প্রতীক। আমি একবার একটি স্থানীয় বাজারে গিয়েছিলাম, তখন দেখলাম সব বয়সী নারীরাই খুব সুন্দরভাবে মাথা ঢেকেছেন, তাতে তাদের ব্যক্তিত্ব যেন আরও উজ্জ্বল দেখাচ্ছিল। এটা শুধু কোনো বাধ্যবাধকতা নয়, বরং এক ধরনের আত্মসম্মানবোধ আর ঐতিহ্যের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা। পুরুষদের ক্ষেত্রেও ঢিলেঢালা পোশাক, যেমন বাটিক শার্ট বা পাঞ্জাবীর মতো কিছু, বেশ জনপ্রিয়। আমার মনে হয়, এই বিষয়টা জানা থাকলে আমাদের পোশাক নিয়ে সেখানে মানিয়ে নিতে সুবিধা হবে এবং স্থানীয়দের কাছে আমাদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জন্মাবে। এটা শুধু অন্যের সংস্কৃতিকে সম্মান করাই নয়, বরং নিজেরাও সেই সংস্কৃতির একটা অংশ হয়ে ওঠার একটা সুযোগ। বিশেষ করে মসজিদ বা সরকারি ভবনে ঢোকার সময় শালীন পোশাক পরাটা অত্যাবশ্যক, যা আমি নিজের চোখেই দেখেছি। অনেকে হয়তো ভাবেন, বিদেশ মানেই মুক্ত পোশাক, কিন্তু ব্রুনাইয়ে গেলে আপনার এই ধারণাটা কিছুটা বদলাতে পারে।

নারীদের পোশাকের আদব

নারীদের জন্য ব্রুনাইয়ে এমন পোশাক পরা উচিত যা কাঁধ থেকে হাঁটু পর্যন্ত আবৃত রাখে। টাইট বা উন্মুক্ত পোশাক পরিহার করা ভালো। যদিও পর্যটকদের জন্য খুব কঠোর নিয়ম নেই, তবে স্থানীয় সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় অনুভূতিকে সম্মান জানানো উচিত। আমি যখন তাদের স্থানীয় কোনো অনুষ্ঠানে যাই, তখন দেখি নারীরা সুন্দর উজ্জ্বল রঙের পোশাকের সাথে ম্যাচিং হিজাব পরেন, যা দেখতে দারুণ লাগে।

পুরুষদের পোশাকের আদব

পুরুষদের জন্য হাফপ্যান্ট বা স্লিভলেস টপস পরিহার করা উচিত, বিশেষ করে জনসমাগমপূর্ণ স্থানে বা ধর্মীয় উপাসনালয়ে। মসজিদে যাওয়ার সময় লুঙ্গি বা সাধারণ প্যান্টের সাথে শার্ট বা পাঞ্জাবী পরা যেতে পারে। আমি দেখেছি, ব্রুনাইয়ের পুরুষরা ফরমাল অনুষ্ঠানে বাটিক শার্ট পরতে পছন্দ করেন, যা তাদের ঐতিহ্যের অংশ।

শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময়: আন্তরিকতার সেতুবন্ধন

Advertisement

ব্রুনাইয়ের মানুষজন যে কতটা বিনয়ী আর অতিথিপরায়ণ, সেটা আমি তাদের সাথে মিশে খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করেছি। যখন কারো সাথে দেখা হয়, তাদের শুভেচ্ছা জানানোর ধরনটা খুব সুন্দর। বিশেষ করে, যখন আমি প্রথম একজন ব্রুনাইবাসীর সাথে পরিচিত হই, তখন তারা যে উষ্ণ হাসি আর বিনয়ের সাথে আমার সাথে কথা বলা শুরু করেছিলেন, তাতে আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়েছিলাম। আমাদের দেশে আমরা যেমন হাত মেলাই, সেখানেও পুরুষদের মধ্যে করমর্দন বেশ সাধারণ। তবে বিপরীত লিঙ্গের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে কোনো মুসলিম নারীর সাথে পরিচিত হলে, তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করা উচিত। যদি তিনি হাত না বাড়ান, তাহলে শুধু মাথা নোয়ানো বা মৃদু হাসি দিয়েই শুভেচ্ছা জানানো যেতে পারে। এটা তাদের সংস্কৃতির প্রতি সম্মান জানানোর একটা বড় দিক, যা আমার মনে হয় সবারই জানা উচিত। আমি একবার এক পারিবারিক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম, তখন দেখি ছোটরাও বড়দের প্রতি কতটা শ্রদ্ধাশীল। তারা শুধু সালাম জানায় না, বরং হাত বুকের কাছে এনে মাথা হালকা করে নোয়ায়, যা তাদের সংস্কৃতিতে গভীর শ্রদ্ধার প্রতীক। এই ছোট ছোট বিষয়গুলো আসলে আমাদের ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে, কারণ আমরা তখন শুধু একজন পর্যটক নই, বরং স্থানীয় সংস্কৃতির একজন অংশ হয়ে উঠি।

পরিচিত হওয়ার আদব

প্রথমবার কারো সাথে পরিচিত হলে, “আসসালামু আলাইকুম” বলে শুভেচ্ছা জানানোই সবচেয়ে ভালো। যদি প্রতিপক্ষ অমুসলিম হন, তাহলে “হ্যালো” বা “গুড মর্নিং” এর মতো সাধারণ শুভেচ্ছা ব্যবহার করা যেতে পারে।

শারীরিক স্পর্শের সীমাবদ্ধতা

পুরুষদের সাথে করমর্দন করা সাধারণ, তবে একজন মুসলিম নারীর সাথে করমর্দন করার আগে তার অনুমতি বা আগ্রহের জন্য অপেক্ষা করুন। যদি তিনি হাত বাড়িয়ে না দেন, তাহলে মাথা নোয়ানো বা হাসিই যথেষ্ট। ছোট বাচ্চাদের মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করা যেতে পারে, তবে তাদের অভিভাবকদের অনুমতি নিয়ে।

সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ: দাওয়াতের আদব

ব্রুনাইয়ে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে বা কারো বাড়িতে দাওয়াতে গেলে কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখা উচিত। আমি নিজে যখন ব্রুনাইয়ের এক বন্ধুর বাড়িতে প্রথম দাওয়াতে গিয়েছিলাম, তখন সে আমাকে আগে থেকেই কিছু নিয়মকানুন জানিয়ে দিয়েছিল, যা আমার জন্য বেশ সহায়ক হয়েছিল। যেমন, তাদের বাড়িতে ঢোকার আগে জুতো বাইরে খুলে রাখাটা একটা সাধারণ প্রথা। এটা শুধু পরিচ্ছন্নতা নয়, বরং বাড়ির মালিকের প্রতি শ্রদ্ধারও প্রতীক। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বাম হাত দিয়ে কিছু আদান-প্রদান না করা। তাদের সংস্কৃতিতে বাম হাতকে অপরিষ্কার ধরা হয়, তাই খাবার বা উপহার দেওয়া-নেওয়ার সময় সবসময় ডান হাত ব্যবহার করা উচিত। আমার মনে আছে, আমি একবার ভুল করে বাম হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম, তখন আমার বন্ধু দ্রুত আমাকে ইশারা করে ডান হাত ব্যবহার করতে বলেছিল। এতে আমি কিছুটা বিব্রত হলেও তাদের সংস্কৃতিকে সম্মান জানাতে পেরেছিলাম। তাই এই বিষয়গুলো আগে থেকে জেনে রাখা খুবই জরুরি। দাওয়াতে গেলে সাধারণত খাবার পরিবেশনের আগে প্রার্থনা করা হয়, আর তখন চুপ করে বসে থাকাটাই সমীচীন। খাবার টেবিলে বসেও কিছু আদব রক্ষা করতে হয়, যা তাদের পারিবারিক মূল্যবোধের অংশ।

দাওয়াত গ্রহণ ও বর্জন

যদি কোনো দাওয়াত পান, চেষ্টা করুন সেটা গ্রহণ করতে। যদি কোনো কারণে যেতে না পারেন, তাহলে বিনয়ের সাথে এবং দ্রুততম সময়ে জানিয়ে দিন। অযথা দেরি করা বা শেষ মুহূর্তে বাতিল করাটা অমার্জনীয় মনে করা হয়।

উপহার ও আতিথেয়তা

দাওয়াত বাড়িতে যাওয়ার সময় ছোটখাটো উপহার নিয়ে যাওয়াটা খুবই প্রশংসনীয়। সেটা খাবার জিনিস হতে পারে বা ঘরের জন্য কোনো ছোট উপহার। উপহার সবসময় ডান হাতে দেবেন। আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জানাতে ভুলবেন না।

বিষয় করণীয় বর্জনীয়
পোশাক শালীন ও আবৃত পোশাক পরুন (বিশেষত ধর্মীয় স্থানে)। অতিরিক্ত খোলামেলা বা টাইট পোশাক।
শুভেচ্ছা ‘আসসালামু আলাইকুম’ বা সম্মানসূচক অভিবাদন। বিপরীত লিঙ্গের সাথে অপ্রয়োজনীয় শারীরিক স্পর্শ।
উপহার/খাবার ডান হাতে আদান-প্রদান করুন। বাম হাত ব্যবহার করা।
জুতো বাড়িতে প্রবেশের আগে জুতো বাইরে খুলুন। জুতো পরেই ঘরে প্রবেশ।

মসজিদে প্রবেশ ও আচরণ: পবিত্রতার প্রতি সম্মান

Advertisement

ব্রুনাইয়ের প্রতিটি মসজিদ যেন এক একটি স্থাপত্যের নিদর্শন। আমি যখন সুলতান ওমর আলী সাইফুদ্দিন মসজিদ দেখতে গিয়েছিলাম, তখন তার সৌন্দর্য দেখে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু শুধু সৌন্দর্যই নয়, মসজিদের ভেতরে প্রবেশ এবং সেখানে আচরণের কিছু নির্দিষ্ট নিয়মকানুন রয়েছে, যা প্রতিটি মুসলিম এবং অমুসলিম উভয়কেই মেনে চলতে হয়। মসজিদে প্রবেশের আগে জুতো খুলে রাখাটা বাধ্যতামূলক। আর নারীদের জন্য মাথা ঢাকার জন্য একটি স্কার্ফ বা হিজাব পরা জরুরি। অনেক মসজিদে প্রবেশের সময় প্রয়োজনীয় পোশাক বিনামূল্যে দেওয়া হয়, যা আমার কাছে বেশ সুবিধাজনক মনে হয়েছে। মসজিদের ভেতরে উচ্চস্বরে কথা বলা বা হাসাহাসি করা একেবারেই অনুচিত। এটি ইবাদতের স্থান, তাই সেখানে নীরবতা এবং শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে আছে, একবার এক পর্যটককে দেখেছিলাম যিনি মসজিদের ভেতরে ছবি তোলার সময় ফ্ল্যাশ ব্যবহার করছিলেন, যা সেখানকার কর্মীরা বিনয়ের সাথে নিষেধ করেছিলেন। এটি আসলে শুধু একটি নিয়ম নয়, বরং ঐ স্থানের পবিত্রতার প্রতি আমাদের নিজেদের সম্মান জানানোর একটি উপায়।

পরিচ্ছন্নতা ও প্রস্তুতি

মসজিদে প্রবেশের আগে অজু বা শরীরের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করুন। অপরিষ্কার পোশাক বা শরীর নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করা অনুচিত।

নীরবতা ও শ্রদ্ধা

মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করার পর মোবাইল ফোন সাইলেন্ট রাখুন এবং উচ্চস্বরে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। ইবাদতরত ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন।

খাবার ও পানীয়ের নিয়মকানুন: হালালের গুরুত্ব

ব্রুনাই একটি ইসলামিক রাষ্ট্র হওয়ায় খাবার ও পানীয়ের ক্ষেত্রে হালালের গুরুত্ব অপরিসীম। আমি যখন ব্রুনাইয়ে ছিলাম, তখন দেখেছি প্রায় প্রতিটি রেস্তোরাঁ এবং দোকানে ‘হালাল’ সার্টিফিকেট টাঙানো থাকে। এটা আমার মতো মুসলিমদের জন্য সত্যিই এক দারুণ স্বস্তির ব্যাপার ছিল, কারণ খাবারের হালাল হওয়া নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা করতে হয়নি। শূকরের মাংস এবং অ্যালকোহল সেখানে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এমনকি অমুসলিমদেরও জনসম্মুখে অ্যালকোহল পান করা থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করা হয়। আমার মনে পড়ে, একবার এক দোকানে গিয়ে আমি খাবারের উপাদান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তখন বিক্রেতা খুব ধৈর্য ধরে আমাকে সব বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। এই বিষয়টা তাদের সততা এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতির একটা প্রমাণ। তাই ব্রুনাইয়ে খাবারের দোকানে বা রেস্তোরাঁয় গিয়ে হালাল খাবার বেছে নেওয়াটা খুবই সহজ। আমি যখন ব্রুনাইয়ের ঐতিহ্যবাহী খাবার ‘অ্যামবুয়াত’ খেয়েছিলাম, তখন দেখেছি তারা কতটা যত্ন করে প্রতিটি হালাল উপাদান ব্যবহার করে।

হালাল খাবারের নির্বাচন

ব্রুনাইয়ে হালাল খাবার খুঁজে পাওয়া খুব সহজ। বেশিরভাগ রেস্তোরাঁ এবং সুপারমার্কেটে ‘হালাল’ চিহ্ন থাকে। সন্দেহ থাকলে জিজ্ঞাসা করতে দ্বিধা করবেন না।

অ্যালকোহল ও শূকরের মাংস

ব্রুনাইয়ে অ্যালকোহল পান করা বা বিক্রি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। জনসম্মুখে এর ব্যবহার আইনত দণ্ডনীয় হতে পারে। শূকরের মাংসও মুসলিমদের জন্য হারাম হওয়ায় এটি সচরাচর পাওয়া যায় না এবং এর থেকে দূরে থাকা উচিত।

উপহার আদান-প্রদান: ভালোবাসার প্রকাশ

Advertisement

উপহার আদান-প্রদান পৃথিবীর প্রায় সব সংস্কৃতিতেই ভালোবাসার আর শ্রদ্ধার প্রতীক। ব্রুনাইয়েও এর গুরুত্ব কম নয়। আমি দেখেছি, সেখানে ছোট ছোট উপহারের মাধ্যমেও মানুষজন তাদের আন্তরিকতা প্রকাশ করে। যখন আপনি কারো বাড়িতে দাওয়াতে যাবেন, তখন ছোট একটি উপহার নিয়ে যাওয়াটা খুবই প্রশংসনীয়। সেটা হতে পারে মিষ্টি, ফল, বা অন্য কোনো স্মারক জিনিস। কিন্তু উপহার দেওয়ার সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত। যেমন, আগেই বলেছি, উপহার সবসময় ডান হাতে দেওয়া উচিত। এটা কেবল একটি সাধারণ প্রথা নয়, বরং আপনার আন্তরিকতা আর শ্রদ্ধার প্রতীক। আর উপহার হিসেবে অ্যালকোহল বা শূকরের মাংস দিয়ে তৈরি কোনো পণ্য দেওয়া একেবারেই অনুচিত, কারণ এগুলো তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিপন্থী। একবার আমার এক ব্রুনাই বন্ধুকে আমি ছোট একটি সুভেনিয়র দিয়েছিলাম, তখন সে যে আন্তরিকতার সাথে সেটা গ্রহণ করেছিল, তাতে আমি সত্যিই আনন্দিত হয়েছিলাম। উপহারের দামি হওয়াটা বড় কথা নয়, বরং এর পেছনের অনুভূতিটাই আসল। উপহার দেওয়ার পর ‘ধন্যবাদ’ বা ‘ধন্যবাদ জানাই’ এমন কিছু বলাটা তাদের সংস্কৃতিতে স্বাভাবিক।

উপহারের ধরন ও নির্বাচন

ছোটখাটো গৃহস্থালির জিনিস, সুগন্ধি, ফল, মিষ্টি বা স্থানীয় কারুশিল্পের পণ্য উপহার হিসেবে জনপ্রিয়। ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক কোনো কিছু পরিহার করুন।

উপহার গ্রহণ ও উন্মোচন

브루나이 무슬림 예절 관련 이미지 2
উপহার পেলে সাথে সাথে সবার সামনে খোলা উচিত নয়, বিশেষ করে যখন উপহারদাতা উপস্থিত থাকেন। পরে ব্যক্তিগতভাবে উপহার খুলে দেখুন এবং ধন্যবাদ জানান।

গ্ৰন্থসমাপন

ব্রুনাইয়ের সংস্কৃতি সত্যিই এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ, শালীনতা আর অতিথিপরায়ণতা আমাকে বারবার মুগ্ধ করেছে। আমি যখন ব্রুনাইয়ে ছিলাম, তখন অনুভব করেছি যে এই সুন্দর দেশে ভ্রমণ শুধু দর্শনীয় স্থান দেখাই নয়, বরং তাদের জীবনযাপন আর প্রথাগুলোকে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করা। এই ছোট্ট দেশটির প্রতিটি কোণায় যেন এক গভীর ঐতিহ্য আর বিনয়ের সুর বাজে। আশা করি আমার এই অভিজ্ঞতাগুলো আপনাদের ব্রুনাই ভ্রমণের পরিকল্পনায় একটু হলেও কাজে আসবে, আর আপনারা স্থানীয়দের সাথে আরও সুন্দরভাবে মিশে যেতে পারবেন। মনে রাখবেন, যেকোনো নতুন সংস্কৃতিকে সম্মান জানালে সেও আপনাকে দু’হাত বাড়িয়ে আপন করে নেয়!

কিছু দরকারী টিপস যা জেনে রাখা ভালো

১. ভ্রমণের আগে ব্রুনাইয়ের আবহাওয়া সম্পর্কে জেনে নিন, কারণ এখানকার গরম ও আর্দ্রতা বেশ তীব্র হতে পারে। হালকা এবং আরামদায়ক পোশাক সঙ্গে রাখুন, যা একই সাথে শালীনতা বজায় রাখে।

২. স্থানীয় বাজারে বা ছোট দোকানে কেনাকাটা করার সময় কিছুটা দর কষাকষি করতে পারেন, তবে সব দোকানে এটা সম্ভব নাও হতে পারে। সবসময় হাসি মুখে কথা বলুন, তাতে কাজ সহজ হবে।

৩. ব্রুনাইয়ে বেশিরভাগ দোকানে ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ করা হয়, তবে ছোটখাটো কেনাকাটা বা স্থানীয় পরিবহনের জন্য কিছু নগদ ব্রুনাই ডলার সাথে রাখা ভালো।

৪. জরুরি প্রয়োজনে স্থানীয় মোবাইল সিম কিনতে পারেন, যা আপনাকে ইন্টারনেট ব্যবহার এবং যোগাযোগের সুবিধা দেবে। বিমানবন্দরের বাইরেও অনেক দোকানে সিম কার্ড পাওয়া যায়।

৫. সেখানকার মানুষের সাথে কথা বলার সময় তাদের সংস্কৃতি ও ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন। যেকোনো বিষয়ে প্রশ্ন করার আগে অনুমতি চেয়ে নিন, এতে তারা খুশি হবেন।

Advertisement

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির সারসংক্ষেপ

ব্রুনাইয়ে ভ্রমণ মানে শুধু নতুন একটি দেশ দেখা নয়, বরং এর গভীর ঐতিহ্য আর জীবনযাত্রার সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া। শালীন পোশাক, বিশেষ করে জনসমাগমপূর্ণ স্থান এবং ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রবেশ করার সময় অপরিহার্য। স্থানীয়দের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় বিনয়ী থাকুন এবং শারীরিক স্পর্শের ক্ষেত্রে তাদের প্রথা মেনে চলুন। যেকোনো দাওয়াত বা সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার সময় জুতো বাইরে রাখা এবং ডান হাতে উপহার বা খাবার আদান-প্রদানের মতো ছোটখাটো বিষয়গুলো আপনার প্রতি তাদের সম্মান বাড়াবে। মসজিদ বা ধর্মীয় স্থানে পবিত্রতা বজায় রাখা এবং নীরবতা অনুশীলন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, হালাল খাবারের প্রতি তাদের অগাধ বিশ্বাস এবং অ্যালকোহল ও শূকরের মাংস থেকে বিরত থাকার নিয়মকানুন মেনে চলাও একজন পর্যটক হিসেবে আপনার দায়িত্ব। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে ভ্রমণ করলে আপনি ব্রুনাইয়ের প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন এবং একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা লাভ করবেন, যা আপনার মনে এক মধুর স্মৃতি হয়ে থাকবে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖

প্র: ব্রুনাইতে পোশাক-পরিচ্ছেদের ক্ষেত্রে কেমন শালীনতা বজায় রাখা উচিত?

উ: ব্রুনাই যেহেতু একটি ইসলামিক দেশ, তাই এখানে পোশাক-পরিচ্ছেদের ক্ষেত্রে শালীনতা বজায় রাখাটা খুবই জরুরি। আমি নিজে যখন ব্রুনাইয়ের বিষয়ে পড়াশোনা করেছি বা পরিচিতদের থেকে জেনেছি, তখন বারবার শুনেছি যে এখানে মুসলিম সংস্কৃতির প্রভাব খুব গভীর। তাই সাধারণ পোশাকে, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে, কাঁধ থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢাকা পোশাক পরা ভালো। পুরুষেরাও জিন্স বা টি-শার্ট পরতে পারেন, তবে ছোট শর্টস না পরাই ভালো। বিশেষ করে মসজিদ বা কোনো ধর্মীয় স্থানে প্রবেশ করার আগে অবশ্যই আপানকে মাথা ঢাকতে হবে এবং শরীর ঢাকা লম্বা পোশাক পরতে হবে। আমার মনে হয়, স্থানীয় সংস্কৃতিকে সম্মান জানানোর জন্য এই ছোট বিষয়গুলো মেনে চলা আমাদের জন্য খুব সহজ, আর এতে স্থানীয়দের কাছে আপনার প্রতি সম্মানও বাড়বে।

প্র: ব্রুনাইতে সামাজিক মেলামেশার সময় কোনো বিশেষ নিয়ম বা অভিবাদন পদ্ধতি আছে কি?

উ: ব্রুনাইতে সামাজিক মেলামেশার ক্ষেত্রেও কিছু মজার দিক আছে! যেমন, আমাদের দেশে যেমন হাত মেলানোটা খুব সাধারণ, ব্রুনাইতে কিন্তু ভিন্ন লিঙ্গের মানুষের সাথে সরাসরি হাত না মেলানোই ভালো, যদি না তারা নিজে থেকে এগিয়ে আসে। বিশেষ করে বয়স্কদের প্রতি সম্মান দেখানোটা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ সময়ই হালকা মাথা নিচু করে বা হাসিমুখে অভিবাদন জানানোই যথেষ্ট। আমার অভিজ্ঞতা বলে, আপনি যদি স্থানীয়দের সাথে কথা বলার সময় বিনয়ী হন এবং তাদের রীতিনীতিকে গুরুত্ব দেন, তাহলে তারা আপনাকে খুব সহজে আপন করে নেবে। কারণ, তাদের সংস্কৃতিতে আতিথেয়তা ও বিনয় খুব মূল্য রাখে।

প্র: ব্রুনাইতে জনসম্মুখে খাওয়া, পান করা বা আবেগ প্রকাশ করার ক্ষেত্রে কি কোনো বিধিনিষেধ আছে?

উ: হ্যাঁ, ব্রুনাইয়ের জনসম্মুখে আচরণের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত। যেহেতু এটি একটি ইসলামিক দেশ এবং শরিয়া আইন ও সাধারণ ইসলামিক অনুশীলনকে অনুসরণ করে, তাই প্রকাশ্যে মদ্যপান বা ধূমপান কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আমি শুনেছি, প্রকাশ্যে ধূমপানের জন্য জরিমানাও হতে পারে। আর আবেগ প্রকাশের ক্ষেত্রে, জনসম্মুখে অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতা দেখানো উচিত নয়; যেমন, হাত ধরাধরি করে হাঁটা বা প্রকাশ্যে চুম্বন এড়িয়ে চলা ভালো। রমজান মাসে স্থানীয়দের সম্মানে দিনের বেলায় প্রকাশ্যে খাওয়া-দাওয়া বা পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত। আমার মনে হয়, এই ছোট ছোট বিষয়গুলো মেনে চললে আপনার ব্রুনাই ভ্রমণ আরও মসৃণ ও আনন্দময় হবে, আর স্থানীয়দের চোখে আপনি একজন শ্রদ্ধাশীল ভ্রমণকারী হিসেবে গণ্য হবেন।

📚 তথ্যসূত্র