আরে বাহ! ব্রুনাইয়ের কফি সংস্কৃতির কথা ভাবতেই জিভে জল এসে গেল, মনটাও কেমন যেন সতেজ হয়ে উঠলো! আমার মনে আছে, প্রথম যখন ব্রুনাই এসেছিলাম, এখানকার ক্যাফেগুলো দেখে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছিলাম। শুধু কফি নয়, প্রতিটি কাপে যেন একটা গল্প লুকিয়ে আছে, একটা উষ্ণ আমন্ত্রণ। আজকাল তো দেখতে পাচ্ছি, আমাদের তরুণ প্রজন্ম এই কফি সংস্কৃতিকে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে, নিত্যনতুন কফি শপ আর স্পেশালিটি কফির আনাগোনায় শহরটা যেন আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে। এখানকার ঐতিহ্যবাহী কপিতিয়াম থেকে শুরু করে আধুনিক সব ক্যাফে, প্রতিটা জায়গাতেই নিজস্ব এক জাদু আছে। কফির সুঘ্রাণে এখানকার সকালগুলো যেন আরও মধুর হয়ে ওঠে। এখানকার কফি শুধুমাত্র পানীয় নয়, এটা যেন ব্রুনাইয়ের আতিথেয়তা আর সামাজিকতার এক দারুণ প্রতীক। বিশেষ করে, “ব্রুনাই কফি ট্রেইল”-এর মতো উদ্যোগগুলো স্থানীয় ক্যাফেগুলোকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরছে, যা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। কফি বিনের উৎস থেকে শুরু করে পরিবেশনের পদ্ধতি পর্যন্ত, প্রতিটি ধাপে যে সূক্ষ্ম কারুকার্য রয়েছে, তা আমার মতো কফিপ্রেমীদের মন জয় করে নেয়। এই আধুনিক যুগে, যেখানে নতুনত্ব আর ঐতিহ্য হাতে হাত রেখে চলে, ব্রুনাইয়ের কফি সংস্কৃতি তার এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
আসুন তাহলে, ব্রুনাইয়ের এই দারুণ কফি সংস্কৃতির খুঁটিনাটি আরও গভীরভাবে জেনে নেওয়া যাক!
ব্রুনাইয়ের কফি: শুধু পানীয় নয়, এক সামাজিক বন্ধন

সত্যি বলতে কী, ব্রুনাইয়ের কফি শুধু এক কাপ পানীয় নয়, এটা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, এক সামাজিক উৎসবের মতো। আমি যখন প্রথম এখানে এসেছিলাম, দেখেছিলাম সকালের আড্ডায় কফির কাপের সঙ্গেই যেন সম্পর্কগুলো আরও গভীর হয়ে উঠছে। কাজের ফাঁকে একটু কফি বিরতি, বন্ধুদের সাথে খোশগল্প, এমনকি পারিবারিক যেকোনো আলোচনার শুরুটাও হয় এক কাপ গরম কফি দিয়ে। এখানকার মানুষজন কফিকে এতটাই আপন করে নিয়েছে যে, যেকোনো অতিথিপরায়ণতার প্রথম ধাপটাই যেন কফি পরিবেশন। আমি তো কতবার দেখেছি, ক্যাফেগুলোতে বসে মানুষজন শুধু কফি পান করছে না, তারা একে অপরের সাথে অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিচ্ছে, নতুন পরিকল্পনা করছে, আর জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তগুলো উপভোগ করছে। এই যে কফির মাধ্যমে মানুষের মধ্যে একটা সেতু তৈরি হচ্ছে, একটা উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ছে, এটাই ব্রুনাইয়ের কফি সংস্কৃতির আসল জাদু। এক কাপ কফি হাতে নিয়ে যখন সূর্যের প্রথম আলো গায়ে মাখি, তখন মনে হয় দিনের শুরুটা এর চেয়ে সুন্দর আর কিছু হতে পারে না। এই অনুভূতিটা এতটাই বাস্তব যে, কোনো যন্ত্র বা অ্যালগরিদম দিয়ে এর গভীরতা মাপা সম্ভব নয়, এটা শুধু মন দিয়েই অনুভব করা যায়। এখানকার ক্যাফেগুলোও এমনভাবে সাজানো থাকে যেন প্রতিটা কোণায় গল্প লুকিয়ে থাকে, যা আমাদের আরও বেশি করে আকৃষ্ট করে।
কফি আড্ডা: সম্পর্ক তৈরির এক দারুণ মাধ্যম
ব্রুনাইয়ের মানুষজন কফিকে শুধু শরীর জাগানো পানীয় হিসেবে দেখে না, বরং এটাকে দেখে সম্পর্ক তৈরির এক দারুণ মাধ্যম হিসেবে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, কত নতুন মানুষের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে শুধু এক কাপ কফি টেবিলে বসে! এখানকার কফি শপগুলোতে এমন একটা পরিবেশ থাকে যেখানে সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে গল্প করতে পারে, হাসতে পারে। তরুণ-তরুণীরা এখানে এসে নতুন আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করে, প্রবীণরা পুরনো দিনের গল্প শোনান। এই যে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কফি আমাদের সামাজিক জীবনের এত বড় অংশ হয়ে উঠেছে, এটা সত্যিই অবাক করার মতো। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে যখন পরিবারের সবাই মিলে কোনো ক্যাফেতে যায়, তখন দেখা যায় কফি কাপের সাথে সাথে তাদের মুখেও হাসি লেগে থাকে। এটা কেবল এক কাপ কফি নয়, এটা পরিবারের সদস্যদের এক সাথে সময় কাটানোর এক অজুহাত, এক মিষ্টি উপলক্ষ।
উষ্ণ আতিথেয়তা আর কফির সুঘ্রাণ
ব্রুনাইয়ের আতিথেয়তার কথা বলতেই আমার মনে পড়ে যায় কফির কথা। এখানকার মানুষেরা অতিথিদের যেভাবে স্বাগত জানায়, তাতে কফি একটা বড় ভূমিকা পালন করে। কোনো বাড়িতে গেলে প্রথমেই তারা কফি অফার করবে। আমার মনে আছে, একবার এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছিলাম, সে নিজে হাতে কফি বানিয়ে আমার জন্য নিয়ে এসেছিল। সেই কফির স্বাদ আর তার আন্তরিকতা, দুটোই আমার মনে গেঁথে আছে। এই আন্তরিকতা, এই ভালোবাসাটা মেশানো থাকে কফির প্রতিটি ফোঁটায়। এটা শুধু একটা প্রথা নয়, এটা তাদের সংস্কৃতির একটা অংশ, যেখানে কফির সুঘ্রাণে মিশে থাকে ভালোবাসা আর সম্মান। আমার মনে হয়, এই কারণেই এখানকার কফি এত স্পেশাল, কারণ এর সাথে জড়িয়ে আছে অসংখ্য মানুষের গল্প আর অনুভূতি।
ঐতিহ্যবাহী কপিতিয়াম: পুরনো দিনের স্বাদ আর গল্প
কপিতিয়াম, এই নামটা শুনলেই আমার মনটা যেন এক মুহূর্তে ব্রুনাইয়ের পুরনো দিনের গলিপথে হারিয়ে যায়। এখানকার ঐতিহ্যবাহী কপিতিয়ামগুলো শুধু কফি শপ নয়, এগুলো যেন এক একটা জীবন্ত ইতিহাস। আমি প্রথম যখন কপিতিয়ামে গিয়েছিলাম, এখানকার কাঠের চেয়ার-টেবিল, দেওয়ালে ঝোলানো পুরনো দিনের ছবি আর কফির মিষ্টি গন্ধ, সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত নস্টালজিক অনুভূতি হয়েছিল। আধুনিক ক্যাফেগুলোর ঝাঁ চকচকে পরিবেশের মাঝেও কপিতিয়ামগুলো তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য আর স্বকীয়তা ধরে রেখেছে। এখানে এলে মনে হয় সময় যেন থেমে গেছে, আর আমরা সবাই মিলে পুরনো দিনের কোনো গল্পে ডুব দিচ্ছি। এখানকার কফি বানানোর পদ্ধতিটাও বেশ ঐতিহ্যবাহী, অনেকটা পুরনো দিনের স্বাদের মতো। গরম কফির সাথে টোস্ট আর নরম সেদ্ধ ডিম, এই ব্রেকফাস্টটা ব্রুনাইয়ের এক চিরাচরিত ছবি। যারা ব্রুনাইয়ের আসল স্বাদ আর সংস্কৃতিকে জানতে চান, তাদের জন্য কপিতিয়ামগুলো এক দারুণ অভিজ্ঞতা হতে পারে। এখানে শুধু কফি পান করা হয় না, এখানে বসে স্থানীয়রা নিজেদের জীবন নিয়ে আলোচনা করে, খবর আদান-প্রদান করে, আর সম্পর্কগুলোকে আরও মজবুত করে। আমার মনে হয়, কপিতিয়ামগুলো ব্রুনাইয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক অমূল্য অংশ।
কপিতিয়ামের বিশেষ কফি এবং নাস্তা
কপিতিয়ামে কফির স্বাদ সত্যিই অসাধারণ। তারা সাধারণত রোবাস্টা বিন ব্যবহার করে এবং কফি তৈরির পদ্ধতিটা খুব সহজ হলেও স্বাদে এর কোনো তুলনা হয় না। এখানকার জনপ্রিয় কফিগুলোর মধ্যে “কপি ও” (কালো কফি), “কপি সি” (মিল্ক কফি, বাষ্পীভূত দুধ দিয়ে তৈরি), এবং “কপি গাও” (স্ট্রং কফি) অন্যতম। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, কপিতিয়ামের কপি সি-এর স্বাদ এতটাই অতুলনীয় যে, আমি ব্রুনাই এলে অবশ্যই অন্তত একবার হলেও এটি পান করার চেষ্টা করি। কফির সাথে এখানকার টোস্টগুলোও দারুণ। মাখন আর কায়া জ্যাম লাগানো টোস্ট, সাথে নরম সেদ্ধ ডিম – এটা ব্রুনাইয়ের এক ক্লাসিক সকালের নাস্তা। এই সহজ খাবারগুলোতেই যেন এখানকার সংস্কৃতির একটা বড় অংশ লুকিয়ে আছে।
সময় যেন থেমে যাওয়া এক অনুভূতি
কপিতিয়ামের পরিবেশটা এতটাই শান্ত আর স্নিগ্ধ যে, এখানে এলে মনে হয় সময় যেন থমকে গেছে। আধুনিক ব্যস্ত জীবনের কোলাহল থেকে দূরে, এখানে বসে আরাম করে কফি পান করা আর মানুষের আনাগোনা দেখা, এটা এক অসাধারণ অনুভূতি। এখানকার চেয়ার-টেবিলগুলোও বেশ ঐতিহ্যবাহী, যা পুরনো দিনের কথা মনে করিয়ে দেয়। আমার মনে আছে, একবার এক প্রবীণ ব্যক্তির সাথে কপিতিয়ামে বসে গল্প করেছিলাম। তিনি আমাকে ব্রুনাইয়ের পুরনো দিনের অনেক গল্প শুনিয়েছিলেন, যা শুনে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। এই যে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে কপিতিয়ামগুলো মানুষকে একত্রিত করে চলেছে, এটা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। কপিতিয়ামগুলো ব্রুনাইয়ের ইতিহাসের নীরব সাক্ষী, আর এর প্রতিটি কোণায় লুকিয়ে আছে অসংখ্য মানুষের স্মৃতি আর গল্প।
আধুনিক ক্যাফে সংস্কৃতি: তরুণ প্রজন্মের নতুন ঠিকানা
ব্রুনাইয়ের আধুনিক ক্যাফেগুলো যেন নতুনত্বের এক সতেজ বাতাস নিয়ে এসেছে। পুরনো ঐতিহ্যবাহী কপিতিয়ামগুলোর পাশাপাশি, এই আধুনিক ক্যাফেগুলো আমাদের তরুণ প্রজন্মের কাছে এক নতুন আকর্ষণ। আমার মনে আছে, প্রথম যখন এখানকার কোনো আধুনিক ক্যাফেতে ঢুকেছিলাম, তার ডিজাইন, পরিবেশ আর কফির ভ্যারাইটি দেখে সত্যিই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। এসব ক্যাফেগুলো শুধু কফি পান করার জায়গা নয়, এগুলো যেন শিল্প, ফ্যাশন আর আধুনিকতার এক দারুণ মিলনস্থল। এখানে আপনি এস্প্রেসো, ল্যাটে, ক্যাপুচিনো থেকে শুরু করে নানান ধরনের স্পেশালিটি কফি পাবেন, যা কফিপ্রেমীদের মন জয় করে নেয়। আমি দেখেছি, এই ক্যাফেগুলোতে তরুণ-তরুণীরা ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছে, বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছে, বা একাকী বসে বই পড়ছে। এখানকার পরিবেশ এতটাই আরামদায়ক যে, একবার ঢুকলে বের হতে মন চায় না। কফি শপগুলো এখন যেন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে, যেখানে আমরা নতুন করে নিজেদের খুঁজে পাই। ব্রুনাইয়ের এই আধুনিক ক্যাফে সংস্কৃতি দিন দিন আরও জনপ্রিয় হচ্ছে, যা আমাদের শহরকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলছে।
স্পেশালিটি কফির নতুন স্বাদ
আধুনিক ক্যাফেগুলো ব্রুনাইয়ের কফি সংস্কৃতিতে স্পেশালিটি কফির এক নতুন দিক খুলে দিয়েছে। এখানে শুধু কফি নয়, কফি বিনের উৎস, রোস্টিং পদ্ধতি, আর বারিস্টার শিল্পকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। আমি নিজে দেখেছি, বারিস্টাররা কতটা যত্ন নিয়ে প্রতিটি কাপ কফি তৈরি করেন। তারা বিভিন্ন ধরনের কফি বিন ব্যবহার করেন, যেমন ইথিওপিয়ার ইয়েরগাচেফ, কলম্বিয়ার সুপ্রেমো, বা ব্রাজিলের সান্তোস। প্রতিটি কফির স্বাদ আর গন্ধ একে অপরের থেকে আলাদা, যা কফিপ্রেমীদের জন্য এক দারুণ অভিজ্ঞতা। আমার প্রিয় স্পেশালিটি কফি হলো ল্যাটে আর্ট। এক কাপ গরম ল্যাটেতে বারিস্টাররা যে সুন্দর ডিজাইন তৈরি করে, তা দেখে মন জুড়িয়ে যায়। এই ক্যাফেগুলো কফিকে এক নতুন শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে, যা ব্রুনাইয়ের কফি সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করছে।
ক্যাফে: কাজ আর আড্ডার যুগলবন্দী
আধুনিক ক্যাফেগুলো এখন তরুণ পেশাজীবী এবং শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ আর আড্ডার এক আদর্শ স্থান। আমি প্রায়শই দেখি, কত মানুষ ল্যাপটপ নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করছে, আবার অনেকেই বন্ধুদের সাথে হাসি-ঠাট্টায় মেতে উঠেছে। এই ক্যাফেগুলো ওয়াইফাই, আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা আর মনোরম পরিবেশের কারণে সবার কাছে খুব প্রিয়। আমার মনে আছে, একবার একটা জরুরী প্রজেক্টের কাজ করছিলাম, কিন্তু বাসায় মন বসছিল না। তখন একটা ক্যাফেতে গিয়ে বসেছিলাম, সেখানকার পরিবেশ আর কফির সুঘ্রাণ আমাকে দারুণভাবে কাজে মনোযোগী হতে সাহায্য করেছিল। এই ক্যাফেগুলো শুধু কফি বিক্রি করে না, তারা যেন একটা কমিউনিটি তৈরি করে, যেখানে সবাই নিজেদের মতো করে সময় কাটাতে পারে।
কফি ট্রেইল: ব্রুনাইয়ের স্বাদের যাত্রা
ব্রুনাই কফি ট্রেইল, এই উদ্যোগটা আমার কাছে সত্যিই দারুণ মনে হয়েছে! এটা শুধু একটা ট্রেইল নয়, এটা যেন ব্রুনাইয়ের কফি সংস্কৃতিকে নতুন করে আবিষ্কার করার এক সুযোগ। আমি প্রথম যখন কফি ট্রেইলের কথা শুনেছিলাম, তখনই ভেবেছিলাম, বাহ! এটা তো কফিপ্রেমীদের জন্য এক দারুণ অ্যাডভেঞ্চার হতে পারে। এই ট্রেইলের মাধ্যমে স্থানীয় এবং পর্যটকরা ব্রুনাইয়ের সেরা ক্যাফেগুলো ঘুরে দেখার সুযোগ পায়, কফির ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ উপভোগ করতে পারে। এই উদ্যোগটি স্থানীয় ক্যাফেগুলোকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে সাহায্য করছে, যা ব্রুনাইয়ের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আমি নিজে এই ট্রেইলের কিছু অংশ ঘুরে দেখেছি, আর প্রতিটি ক্যাফের নিজস্বতা আর কফির বৈচিত্র্য দেখে মুগ্ধ হয়েছি। প্রতিটি ক্যাফের এক নিজস্ব গল্প আছে, যা তাদের কফির স্বাদের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। কফি ট্রেইল যেন আমাদের ব্রুনাইয়ের বিভিন্ন অঞ্চলের সংস্কৃতির সাথে কফির এক দারুণ মেলবন্ধন তৈরি করে। আমার মনে হয়, কফি ট্রেইল শুধু কফি পান করার জন্য নয়, এটা ব্রুনাইয়ের স্থানীয় শিল্প, সংস্কৃতি আর মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার এক অসাধারণ উপায়।
কফি ট্রেইলের সেরা কিছু ক্যাফে
ব্রুনাই কফি ট্রেইলে বেশ কিছু অসাধারণ ক্যাফে রয়েছে, যা কফিপ্রেমীদের জন্য এক দারুণ অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে। আমার ব্যক্তিগত পছন্দের তালিকায় রয়েছে “কালামাটা কফি”, যেখানে তাদের নিজস্ব রোস্ট করা কফির স্বাদ এতটাই দারুণ যে, আমি সবসময়ই এখানকার কফি পছন্দ করি। এছাড়াও, “উইয়ার্ড কার্ভি কফি” এবং “কফি বিন অ্যান্ড টি লিফ” এর মতো জায়গাগুলোও কফি ট্রেইলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রতিটি ক্যাফের নিজস্ব পরিবেশ, বিশেষ কফি আর দারুণ পরিষেবা আমাকে মুগ্ধ করেছে। এখানে গেলে শুধু কফি নয়, তাদের স্ন্যাকস এবং ডেজার্টগুলোও অসাধারণ।
স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে কফি ট্রেইলের ভূমিকা
কফি ট্রেইল শুধু পর্যটকদের আকর্ষণ করে না, এটি স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ছোট ছোট ক্যাফেগুলো পরিচিতি পায়, তাদের ব্যবসা বাড়ে। আমার মনে হয়, স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য এটি এক দারুণ সুযোগ। আমি দেখেছি, এই ট্রেইলের মাধ্যমে অনেক নতুন ক্যাফে ব্রুনাইয়ের মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে, যা তাদের জন্য নতুন নতুন কর্মসংস্থানও তৈরি করছে। এটা শুধু কফি শিল্পের বৃদ্ধি নয়, এটা ব্রুনাইয়ের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে এক ইতিবাচক অবদান।
কফির পেছনের মানুষজন: স্থানীয় উদ্যোগ আর উদ্যোক্তা

কফির প্রতি আমার ভালোবাসা শুধু পান করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছনের গল্প, মানুষজন আর তাদের কঠোর পরিশ্রম আমাকে সবসময়ই টানে। ব্রুনাইয়ের কফি সংস্কৃতিতে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ভূমিকা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। আমি দেখেছি, কত তরুণ-তরুণী নিজেদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে, নিজেদের ক্যাফে খুলেছে, নতুন নতুন কফি বিন নিয়ে গবেষণা করছে। তাদের এই উদ্যোগ শুধু ব্রুনাইয়ের কফি সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করছে না, বরং আরও অনেককে অনুপ্রাণিত করছে। এখানকার স্থানীয় রোস্টার এবং বারিস্টাররা তাদের দক্ষতা আর অভিজ্ঞতার মাধ্যমে কফিকে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি কাপ কফির পেছনে যে গল্প আর শ্রম লুকিয়ে আছে, তা জানলে কফির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধ আরও বেড়ে যায়। আমি নিজে কিছু স্থানীয় উদ্যোক্তার সাথে কথা বলেছি, তাদের প্যাশন আর ডেডিকেশন দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। তারা শুধু ব্যবসা করছেন না, তারা যেন কফির মাধ্যমে এক নতুন কমিউনিটি তৈরি করছেন, যেখানে সবাই মিলে কফি নিয়ে নতুন কিছু শিখছে আর শেয়ার করছে।
স্থানীয় রোস্টার: কফির প্রাণ
কফির আসল স্বাদ নির্ভর করে এর রোস্টিং পদ্ধতির উপর। ব্রুনাইয়ে কিছু স্থানীয় রোস্টার আছেন যারা নিজেদের হাতে কফি বিন রোস্ট করেন এবং তাদের এই শিল্প সত্যিই অসাধারণ। আমি একবার একটি স্থানীয় রোস্টারের কর্মশালায় অংশ নিয়েছিলাম, সেখানে দেখেছিলাম কিভাবে কাঁচা কফি বিনকে ধাপে ধাপে রোস্ট করে তার আসল ফ্লেভার বের করে আনা হয়। তাদের দক্ষতা আর সূক্ষ্মতা দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম। এই রোস্টাররা শুধু কফি বিন রোস্ট করেন না, তারা কফির প্রতি তাদের ভালোবাসা আর আবেগও মিশিয়ে দেন। তাদের রোস্ট করা কফির স্বাদ এতটাই অনন্য যে, আমি মনে করি তাদের অবদান ব্রুনাইয়ের কফি সংস্কৃতিতে অনস্বীকার্য।
উদ্যোক্তাদের গল্প: স্বপ্ন থেকে সফলতায়
ব্রুনাইয়ের অনেক তরুণ-তরুণী নিজেদের ছোট ছোট ক্যাফে বা কফি ভ্যান নিয়ে তাদের স্বপ্ন পূরণ করছে। আমি এমন অনেক উদ্যোক্তার গল্প শুনেছি, যারা শূন্য থেকে শুরু করে নিজেদের একটি সফল কফি ব্যবসা তৈরি করেছেন। তাদের এই পথচলা মোটেও সহজ ছিল না, কিন্তু তাদের কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় আর কফির প্রতি ভালোবাসা তাদের সফলতার শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে। আমার মনে আছে, একবার এক তরুণী উদ্যোক্তার সাথে কথা বলেছিলাম, সে আমাকে বলেছিল কিভাবে সে তার সকল সঞ্চয় দিয়ে একটি ছোট কফি শপ খুলেছিল। আজ তার ক্যাফেটি ব্রুনাইয়ের অন্যতম জনপ্রিয় একটি জায়গা। তাদের এই গল্পগুলো আমাকে সবসময় অনুপ্রাণিত করে।
কফি আর ডিজিটাল যুগ: অনলাইন সম্প্রদায়ের উত্থান
আরে! আজকাল তো কফি শুধু ক্যাফে বা কপিতিয়ামের টেবিলেই সীমাবদ্ধ নেই, এটা ডিজিটাল জগতেও এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আমি দেখেছি, ব্রুনাইয়ের কফিপ্রেমীরা অনলাইনেও নিজেদের এক দারুণ কমিউনিটি তৈরি করেছে। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে তারা কফি নিয়ে আলোচনা করে, নতুন ক্যাফের রিভিউ দেয়, আর নিজেদের কফি তৈরির অভিজ্ঞতা শেয়ার করে। এটা সত্যিই দারুণ যে, কফি কিভাবে আমাদের ডিজিটাল জীবনকেও এত প্রাণবন্ত করে তুলেছে। এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো নতুন নতুন ক্যাফেগুলোকে পরিচিতি পেতে সাহায্য করছে, আর কফিপ্রেমীরাও নতুন জায়গার সন্ধান পাচ্ছে। আমি নিজেও দেখেছি, অনেক সময় নতুন কোনো ক্যাফের সন্ধান আমি অনলাইন রিভিউ দেখেই পাই। এই ডিজিটাল কমিউনিটি শুধু কফি সম্পর্কে তথ্য আদান-প্রদান করে না, এটি কফিপ্রেমীদের মধ্যে এক ধরনের বন্ধনও তৈরি করে। আমার মনে হয়, কফি আর ডিজিটাল যুগের এই মেলবন্ধন ব্রুনাইয়ের কফি সংস্কৃতিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
কফি রিভিউ: অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সেরা ক্যাফের সন্ধান
আমরা এখন এমন এক যুগে বাস করছি, যেখানে যেকোনো কিছুর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমরা অনলাইনে তার রিভিউ খুঁজি। কফির ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। ব্রুনাইয়ের কফিপ্রেমীরা বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নতুন ক্যাফে বা তাদের পছন্দের কফি শপের রিভিউ দেয়। এই রিভিউগুলো নতুন কফিপ্রেমীদের জন্য এক দারুণ গাইড হিসেবে কাজ করে। আমার মনে আছে, একবার আমি অনলাইনে একটি ক্যাফের দারুণ রিভিউ দেখে সেখানে গিয়েছিলাম, আর সেই কফির স্বাদ এতটাই অসাধারণ ছিল যে, আমি অভিভূত হয়েছিলাম। এই রিভিউগুলো শুধু ক্যাফেগুলোকে সাহায্য করে না, এটি আমাদের মতো কফিপ্রেমীদেরও সেরা কফি খুঁজে পেতে সাহায্য করে।
কফি ফটোগ্রাফি: ইনস্টাগ্রামে কফির সৌন্দর্য
ইনস্টাগ্রাম খুললেই আজকাল নানা ধরনের কফি ফটোগ্রাফি দেখা যায়। ব্রুনাইয়ের কফিপ্রেমীরাও এই ট্রেন্ডে পিছিয়ে নেই। সুন্দর করে সাজানো এক কাপ কফি, সাথে মনোরম পরিবেশের ছবি, যা দেখে সত্যিই মন জুড়িয়ে যায়। এই ফটোগ্রাফিগুলো শুধু কফির সৌন্দর্যকে তুলে ধরে না, এটি ক্যাফেগুলোর ব্র্যান্ডিংয়েও সাহায্য করে। আমার নিজের ইনস্টাগ্রাম ফিডও অনেক সময় কফির সুন্দর ছবিতে ভরে থাকে। এই ডিজিটাল যুগে, কফি যেন শুধু পানীয় নয়, এটি এক ধরনের ভিজ্যুয়াল আর্টেও পরিণত হয়েছে।
কফি ও স্বাস্থ্য: একটি সুষম জীবনযাত্রার অংশ
কফি নিয়ে অনেক সময় অনেক ভুল ধারণা থাকে, কিন্তু আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সঠিক পরিমাণে এবং সঠিকভাবে পান করলে কফি আমাদের স্বাস্থ্য এবং মেজাজ দুটোর জন্যই দারুণ। আমি নিজে যখন খুব ক্লান্ত থাকি বা দিনের শুরুটা সতেজভাবে করতে চাই, তখন এক কাপ কফি আমাকে অসাধারণ শক্তি আর সতেজতা দেয়। ব্রুনাইয়ের মানুষজনও কফিকে তাদের সুষম জীবনযাত্রার এক অংশ হিসেবে দেখে। কফি শুধু আমাদের সতেজ করে না, এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তবে, অবশ্যই অতিরিক্ত কফি পান করা উচিত নয়, কারণ যেকোনো কিছুর অতিরিক্তই ক্ষতিকর। আমি মনে করি, কফিকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা উচিত, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এখানকার ক্যাফেগুলোও এখন স্বাস্থ্য সচেতন কফিপ্রেমীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের অপশন রাখছে, যেমন ডিক্যাফ কফি, ল্যাকটোজ-মুক্ত দুধের কফি ইত্যাদি। এটি কফিকে আরও বেশি মানুষের কাছে সহজলভ্য করে তুলেছে।
সঠিক কফি: মন ও শরীর উভয়ের জন্য
সঠিক পরিমাণে কফি পান করলে তা আমাদের মন এবং শরীর উভয়ের জন্যই উপকারী। কফি আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে, মনোযোগ বাড়ায় এবং মেজাজ ভালো রাখে। আমি নিজেও সকালে এক কাপ কফি পান করলে নিজেকে আরও বেশি এনার্জেটিক অনুভব করি। তবে, কফি বেছে নেওয়ার সময় তার গুণগত মান এবং উৎস সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত। এখানকার অনেক ক্যাফেতেই এখন অর্গানিক বা ফেয়ার ট্রেড কফি পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্যগত দিক থেকে আরও ভালো।
কফি পানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
কফি পানের সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখলে এর স্বাস্থ্য উপকারিতা আরও বাড়ানো যায়। প্রথমত, ঘুমানোর আগে কফি পান করা এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এটি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। দ্বিতীয়ত, অতিরিক্ত চিনি বা ক্রিম যোগ না করে কফি পান করলে তা স্বাস্থ্যসম্মত হয়। আমার মনে হয়, ব্ল্যাক কফি বা সামান্য দুধ যোগ করা কফিই স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ভালো। এছাড়াও, কফির গুণগত মান ভালো হওয়া উচিত। সস্তা বা নিম্নমানের কফি স্বাস্থ্যের জন্য ততটা উপকারী নাও হতে পারে। সব মিলিয়ে, কফিকে একটি সুষম খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।
| বৈশিষ্ট্য | ঐতিহ্যবাহী কপিতিয়াম | আধুনিক ক্যাফে |
|---|---|---|
| পরিবেশ | শান্ত, ঐতিহ্যবাহী, নস্টালজিক, কাঠামোগতভাবে সাধারণ | প্রাণবন্ত, আধুনিক, ডিজাইন-ভিত্তিক, আরামদায়ক |
| কফির প্রকার | কপি ও, কপি সি, কপি গাও (মুলত ঐতিহ্যবাহী ব্রুনাই কফি) | এস্প্রেসো, ল্যাটে, ক্যাপুচিনো, স্পেশালিটি কফি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ভ্যারাইটি |
| জনপ্রিয়তা | প্রবীণ, স্থানীয়, ঐতিহ্যপ্রেমী | তরুণ প্রজন্ম, পেশাজীবী, পর্যটক, আধুনিক রুচি সম্পন্ন মানুষ |
| খাবার | টোস্ট, নরম সেদ্ধ ডিম, স্থানীয় স্ন্যাকস | বিভিন্ন ডেজার্ট, পেস্ট্রি, স্যান্ডউইচ, আন্তর্জাতিক খাবার |
| সুযোগ-সুবিধা | মুলত আড্ডা ও সামাজিকীকরণ | ফ্রি ওয়াইফাই, পাওয়ার আউটলেট, কাজের পরিবেশ, আধুনিক বাথরুম |
গল্পের শেষ
ব্রুনাইয়ের কফি নিয়ে আমার এই লম্বা যাত্রার শেষে একটা কথাই বারবার মনে হচ্ছে – এটা শুধু কোনো পানীয় নয়, এটা আমাদের জীবনের অংশ, আমাদের গল্প বলার মাধ্যম। কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে কত স্মৃতি তৈরি হয়, কত সম্পর্ক মজবুত হয়। ব্রুনাইয়ের ঐতিহ্যবাহী কপিতিয়াম থেকে শুরু করে আধুনিক ক্যাফেগুলো, প্রতিটি জায়গাই যেন এক একটা গল্প নিয়ে বসে আছে। কফি আমাদের সংস্কৃতিকে, আমাদের সামাজিক বন্ধনকে আর নতুনত্বের প্রতি আমাদের ভালোবাসাকে এক সুতোয় গেঁথে রেখেছে। এই স্বাদের যাত্রা শুধু জিভের তৃপ্তি নয়, এটা মনেরও এক দারুণ খোরাক। কফির এই মায়াবী জগতে আপনারা সবাই নিজেদের মতো করে কিছু নতুন অভিজ্ঞতা আর আনন্দ খুঁজে পাবেন, আমি নিশ্চিত!
কিছু দরকারি টিপস
১. ব্রুনাই এলে অবশ্যই ঐতিহ্যবাহী কপিতিয়ামগুলোর কফি আর স্থানীয় নাস্তা চেখে দেখবেন। এখানকার পুরনো দিনের স্বাদ আর স্নিগ্ধ পরিবেশ আপনাকে এক অন্য জগতে নিয়ে যাবে, যা আধুনিকতার ভিড়ে হয়তো আর কোথাও খুঁজে পাবেন না। আমার বিশ্বাস, এই অভিজ্ঞতাটা আপনার মনে দীর্ঘস্থায়ী একটা ছাপ ফেলবে।
২. আধুনিক ক্যাফেগুলোতে স্পেশালিটি কফির এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা নিতে পারবেন। এখানকার বারিস্টারদের কারুকার্য আর কফি তৈরির শিল্প দেখে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। নিত্যনতুন ফ্লেভার আর পরিবেশ আপনাকে সতেজ করে তুলবে, যা যেকোনো কাজের বিরতিতে দারুণ এক মুহূর্ত তৈরি করবে।
৩. ব্রুনাই কফি ট্রেইলে অংশ নিয়ে স্থানীয় ক্যাফেগুলো ঘুরে দেখুন। এটি আপনাকে ব্রুনাইয়ের কফি সংস্কৃতির গভীরে নিয়ে যাবে, যেখানে প্রতিটি ক্যাফেতে কফির ভিন্ন ভিন্ন গল্প আর স্বাদ লুকিয়ে আছে। এই ট্রেইল শুধু কফি নয়, ব্রুনাইয়ের স্থানীয় শিল্প ও সংস্কৃতির সাথেও পরিচয় করিয়ে দেবে।
৪. অনলাইনে ব্রুনাইয়ের কফি কমিউনিটিগুলোতে যোগ দিন। এখানে নতুন ক্যাফের রিভিউ জানতে পারবেন এবং নিজেদের কফি তৈরির অভিজ্ঞতা বা পছন্দের জায়গাগুলো অন্যদের সাথে শেয়ার করতে পারবেন। এটা কফিপ্রেমীদের জন্য এক দারুণ প্ল্যাটফর্ম, যেখানে সবাই নিজেদের ভালোবাসার পানীয় নিয়ে আলোচনা করতে পারে।
৫. স্বাস্থ্যসম্মতভাবে কফি পান করুন। অতিরিক্ত চিনি বা ক্রিম এড়িয়ে চলুন এবং ঘুমানোর আগে কফি পান থেকে বিরত থাকুন, কারণ এটি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। পরিমাণ মতো কফি পান করলে এটি আপনার মন ও শরীর দুটোকেই সতেজ রাখতে সাহায্য করবে, আর আপনি আরও বেশি এনার্জেটিক অনুভব করবেন।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এক নজরে
ব্রুনাইয়ের কফি সংস্কৃতি আসলে ঐতিহ্য আর আধুনিকতার এক দারুণ মিশ্রণ, যেখানে কফি শুধু এক পানীয় নয়, বরং সামাজিক বন্ধন আর উষ্ণ আতিথেয়তার প্রতীক। ঐতিহ্যবাহী কপিতিয়ামগুলো পুরনো দিনের গল্প আর স্বাদ ধরে রেখেছে, আর আধুনিক ক্যাফেগুলো তরুণ প্রজন্মের নতুন ঠিকানা হয়ে উঠেছে। কফি ট্রেইল স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এবং কফির পেছনের উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ডিজিটাল যুগেও কফি তার জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে, আর স্বাস্থ্য সচেতনতা বজায় রেখে এর উপভোগকারীরা আরও বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সব মিলিয়ে, ব্রুনাইয়ের কফি সংস্কৃতি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অভিজ্ঞতার জন্ম দিচ্ছে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖
প্র: ব্রুনাইয়ের কফি সংস্কৃতিতে ঐতিহ্যবাহী ‘কপিতিয়াম’ এবং আধুনিক ক্যাফেগুলোর মধ্যে মূল পার্থক্য কী, আর কফিপ্রেমীরা সাধারণত কোনটি বেশি পছন্দ করেন?
উ: আহা, এই প্রশ্নটা আমারও প্রায়ই মাথায় আসে! ব্রুনাইয়ের কফি সংস্কৃতিতে ‘কপিতিয়াম’ আর আধুনিক ক্যাফে – দুটোরই নিজস্ব একটা চমৎকার গল্প আছে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, যখন প্রথম ব্রুনাই এসেছিলাম, কপিতিয়ামগুলোর ভেতরের উষ্ণতা আর পুরনো দিনের ঘ্রাণ আমাকে ভীষণভাবে টেনেছিল। কপিতিয়ামগুলো হলো যেন ব্রুনাইয়ের আত্মার একটা অংশ, যেখানে সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে দুপুরের হালকা আড্ডা, সবকিছুরই একটা সহজলভ্য আর ঘরোয়া পরিবেশ থাকে। এখানে কফিটা সাধারণত একটু স্ট্রং, চিনি-দুধের মিশেলে দারুণ এক স্বাদ, আর তার সাথে টোস্ট বা ডিম ভাজা তো চাই-ই চাই!
দামেও বেশ সাশ্রয়ী হয়, আর এখানকার স্থানীয়দের সাথে মিশে যাওয়ার সুযোগটা অসাধারণ।অন্যদিকে, আধুনিক ক্যাফেগুলো একদম নতুন প্রজন্মের মনের মতো করে তৈরি হয়েছে। ফ্রেশলি রোস্টেড বিন, ল্যাটে আর্ট, কোল্ড ব্রিউ—সবকিছুতেই যেন এক আধুনিক ছোঁয়া। এখানে ওয়েস্টার্ন স্টাইলের স্ন্যাকস, পেস্ট্রি আর দারুণ সব ডেজার্ট পাওয়া যায়। আমার মতো অনেকেই এখানে কাজ করতে বা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে আসেন, কারণ এখানকার আরামদায়ক পরিবেশ আর ওয়াইফাই সুবিধা বেশ ভালো। তবে হ্যাঁ, দামটা কপিতিয়ামের তুলনায় একটু বেশিই হয়।আসলে, কোনটি বেশি জনপ্রিয় তা বলা মুশকিল। যারা ঐতিহ্য আর স্থানীয় স্বাদ পছন্দ করেন, তারা কপিতিয়ামকে ভালোবাসেন। আর যারা নতুনত্ব, কোয়ালিটি কফি আর আরামদায়ক পরিবেশ খোঁজেন, তাদের কাছে আধুনিক ক্যাফেগুলোই পছন্দের। আমি তো বলি, ব্রুনাইয়ের কফি সংস্কৃতিকে পুরোপুরি উপভোগ করতে হলে দুটো জায়গাতেই ঢুঁ মারা উচিত। কপিতিয়াম আপনাকে ব্রুনাইয়ের অতীতের স্বাদ দেবে, আর আধুনিক ক্যাফেগুলো বর্তমানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে। দুটোই তো আমাদের জীবনের অংশ, তাই না?
প্র: ব্রুনাইয়ে কফিপ্রেমীরা কোন ধরনের বিশেষ কফি বা স্থানীয় পানীয় উপভোগ করতে পারেন, যা অন্য কোথাও সহজে পাওয়া যায় না?
উ: ওহ, দারুণ একটা প্রশ্ন! ব্রুনাইয়ে এসে এখানকার বিশেষ কফি আর স্থানীয় পানীয় না খেলে কফিপ্রেমিকের মন ভরে না। আমার মনে আছে, প্রথম যখন এক স্থানীয় কপিতিয়ামে বসে ‘কফি ও’ (Kopi O) অর্ডার করেছিলাম, প্রথম চুমুকেই যেন এক অন্যরকম স্বাদ পেয়েছিলাম। এটা হলো কালো কফি, সাধারণত কোনো চিনি বা দুধ ছাড়া, একদম খাঁটি কফির স্বাদ। তবে চাইলে হালকা চিনি দিয়েও খাওয়া যায়। এর সুবাসটাই এমন যে একবার খেলে ভুলতে পারবেন না।এছাড়াও, ব্রুনাইয়ের অনেক দোকানে আপনি ‘কফি সিয়াসু’ (Kopi Susu) বা ‘মিল্ক কফি’ পাবেন, যেটা আমাদের সাধারণ দুধ চায়ের মতোই কিন্তু কফির স্বাদ তাতে স্পষ্ট। তবে এর মধ্যে একটা বিশেষত্ব আছে। এখানকার অনেক দোকানে এখনও কফি বিনকে হাতে ভেজে, তারপর বিশেষ উপায়ে কফি তৈরি করে। এই ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে তৈরি কফির স্বাদ সত্যি অন্যরকম। আজকাল ব্রুনাইয়ের কিছু আধুনিক ক্যাফে স্থানীয় উপাদান ব্যবহার করে নতুন নতুন ফিউশন কফি তৈরি করছে, যেমন পানদান বা গুলা মেলাকা (Gula Melaka) ফ্লেভারের কফি। একবার আমি একটা ক্যাফেতে পানদান ল্যাটে খেয়েছিলাম, বিশ্বাস করুন, সেই মিষ্টি সুবাস আর কফির তিক্ততার মিশ্রণটা আজও আমার মুখে লেগে আছে। এই ধরনের ইউনিক ফ্লেভারগুলো শুধু ব্রুনাইয়েই পাওয়া যায়, যা কফিপ্রেমীদের জন্য এক দারুণ অভিজ্ঞতা এনে দেয়। নিজের চোখে দেখা আর নিজের মুখে স্বাদ নেওয়ার মজাই আলাদা!
প্র: ব্রুনাইয়ের কফি শপগুলোতে গিয়ে কী ধরনের অভিজ্ঞতা আশা করা উচিত? পরিবেশ, দাম এবং সামাজিক দিকগুলো কেমন?
উ: ব্রুনাইয়ের কফি শপগুলোতে যাওয়া মানে শুধু কফি পান করা নয়, এটা একটা অভিজ্ঞতা! আমি যখনই এখানে কোনো কফি শপে যাই, একটা জিনিস আমাকে খুব টানে—সেটা হলো এখানকার মানুষের আতিথেয়তা আর শান্ত পরিবেশ।পরিবেশের কথা বললে, কপিতিয়ামগুলোতে আপনি একটা ঐতিহ্যবাহী, নিরিবিলি আর ঘরোয়া আবহ পাবেন। কাঠের আসবাবপত্র, পুরনো দিনের ছবি আর স্থানীয় মানুষের কোলাহল – সব মিলে একটা আরামদায়ক অনুভূতি। অন্যদিকে, আধুনিক ক্যাফেগুলো বেশ স্টাইলিশ, আরামদায়ক সোফা, সুন্দর ইন্টেরিয়র আর কিছুটা পাশ্চাত্য ধাঁচের ডিজাইন থাকে। অনেকেই এখানে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে আসেন, আবার কেউ কেউ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেন। লাইটিং আর মিউজিকও সাধারণত বেশ স্নিগ্ধ হয়।দামের দিক থেকে, কপিতিয়ামগুলো অনেক বেশি সাশ্রয়ী। এক কাপ কফি আর সাথে একটা হালকা নাস্তার জন্য খুব বেশি খরচ হয় না। এটা দৈনন্দিন জীবনের একটা অংশ, তাই দামটা সবার নাগালের মধ্যেই থাকে। আধুনিক ক্যাফেগুলোতে অবশ্য কফির দাম একটু বেশি হয়, কারণ তারা স্পেশালিটি কফি বিন ব্যবহার করে এবং পরিবেশনেও নতুনত্ব থাকে। তবে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, এখানেও দামগুলো বেশ যুক্তিসঙ্গত।সামাজিক দিকটা ব্রুনাইয়ের কফি সংস্কৃতির একটা বড় অংশ। কপিতিয়ামগুলো স্থানীয় মানুষের মিলনস্থল, যেখানে বিভিন্ন বয়সী মানুষ একত্রিত হন, গল্প করেন আর দিনের খবর আদান-প্রদান করেন। আর আধুনিক ক্যাফেগুলো তরুণ প্রজন্ম, শিক্ষার্থী এবং প্রফেশনালদের পছন্দের জায়গা। এখানে এসে অনেকেই নতুন বন্ধু তৈরি করেন বা ব্যবসা সংক্রান্ত আলোচনা করেন। আমার মনে হয়, ব্রুনাইয়ের কফি শপগুলোতে আপনি শুধু এক কাপ কফি পান করবেন না, আপনি এখানকার সংস্কৃতি, আতিথেয়তা আর সামাজিক বন্ধনের এক দারুণ চিত্র দেখতে পাবেন। একটা উষ্ণ অভ্যর্থনা আর স্মিত হাসি দিয়ে এখানে আপনাকে স্বাগত জানানো হয়, যা আমার মন ছুঁয়ে যায় প্রতিবার।






